Masum Akhtar and Washiqur Rahman: জামাত ইসলামী আর দায়েশের ইসলামী চরমপন্থী চিন্তাধারার দুই শিকার : কলকাতার মাসুম আখতার এবং বাংলাদেশের ওয়াশিকুর রহমান
নিউ এজ ইসলাম বিশেষ প্রতিনিধি
৪ এপ্রিল ২০১৫
কলকাতার এক মাদ্রাসা শিক্ষক ও উদারপন্থী লেখক মাসুম আখতার এর ওপর চরমপন্থী ইসলামী মতাদর্শের অবলম্বনকারীদের হামলা আবার প্রমানিত করেছে যে পশ্চিম বাংলায় চরমপন্থী ও ধার্মিক হিংসাবাদ বাড়ছে। পশ্চিম বঙ্গ সব সময় সহনশীলতা এবং ধার্মিক ও সংস্কৃতিক উদার্প্ন্থার কেন্দ্র থেকেছে۔ কয়েক দিন আগে তিনি ক্লাসে ইসলামের ওপর বক্তৃতা দেন. তিনি বলেন যে হয় তো কিছু ছাত্র তাঁর বক্তৃতার বিষয় বস্তুর ভুল ব্যখ্যা করে এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে গুজব ছড়িয়ে দেয়। 26 মার্চ এ লোহার রড ধারী এক মব তাঁর ওপর হামলা করে যার ফলে তাঁর মাথা ফেটে যায়. তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতাল ছাড়ার পর তিনি চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি পুলিশ অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ এ পর্যন্ত কাউকে গ্রেপতার করে নি। এলাকার মুসলিম সমুদায় তাঁর বিরুদ্ধে ধার্মিক ভাবনার ওপর আঘাত করার অভিযোগ তুলে মাস পিটিশন দায়ের করেছে। মাসুম আখতার এর কারবালা-র বিষয়ে একটি লেখা গত বছর বাংলা দৈনিক-এ প্রকাশিত হয়ে। এই প্রবন্ধে ধার্মিক নয় একটা এইতিহাসিক দৃষ্টিকোণ ছিল। তার পর থেকে ই তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।আবার তিনি গত বছর একটি কাগজে বর্ধমান বিস্ফোরন সম্পর্কে একটি নিবন্ধ লেখেন। এই নিবন্ধে উনি লেখেন যে যদি কোনো ম্দ্রাসা উগ্রবাদী ঘটনায় লিপ্ত থাকে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হোক।এর ফলে আবার মাদ্রাসা সমাজ তাঁর বিরুদ্ধে খেপে যায়।তিনি বলেন যে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার মোল্লা ও এমাম তাঁর বিরুদ্ধেস্থানীয় এমাম আর মোল্লা মানুষের মধ্যে ভুল ধারনা ছড়াচ্ছে।
মাসুম আখতার এর বক্তব্য ঠিক কি ছিল তা জানা যায় নি কিন্তু সম্বাদ পত্র এর খবর আর লেখকের বয়ান থেকে জানা যায় যে তাঁর বক্তৃতা বা লেখায় কোনো ইসলাম বিরোধী বা কোরান বা নবী বিরোধী বক্তব্য অবশ্য ই ছিল না।তাঁর অপরাধ শুধু এই যে তাঁর বিচার বা দৃষ্টিকোণ ইসলাম বা ইসলামের এইতিহাসিক ঘটনাগুলির সম্পর্কে ইসলামী মৌলবাদীদের ধারনা বা ব্যখ্যা থেকে ভিন্ন। এক এইতিহাসিক বিন্দু থেকে কারবালার ঘটনার ওপর আলোচনা করা বা এই দাবি জানানো যে 'যদি' কোনো মাদ্রাসা দেশ বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হোক ইসলাম বিরোধী বক্তব্য বলে বিবেচনা করা হবে না। অতএব মাসুম আখতার কে আর এক সলমন রুশদী বা তসলিমা নাসরিন এর তকমা দেওয়া নিছক অত্যাচার ও অন্যায়।কলকাতার বৃহত্তর মসলিম সমুদায় বা ধার্মিক সংগঠন এ নিয়ে কোনো অভিযোগ তুলে নি আর না উর্ধু পত্রিকাগুলিতে ই এ নিয়ে কোনো বিবাদ দেখা দিয়েছে। তাই মনে হয় শুধু স্থনীয় এমাম ও মোল্লা-র উস্কানিতে পাড়ার কিছু অশিক্ষিত এবং অতিসরল জনেরা তাঁর ওপর হামলা করে।
এখন পর্যন্ত হত্যার প্রচেষ্টা তখন ই হয়েছে যখন কোনো ব্যক্তির ওপর কোরান বা নবীর বিরুদ্ধে অপমানজনক শব্দ ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে।কিন্তু এখন পরিস্থিতি এই দাঁড়িয়েছে যে ইসলাম বা ইসলামের কোনো এইতিহাসিক ঘটনা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত ধারনা বা ব্যখ্যার বিরুদ্ধে কোনো ব্যক্তিগত বিচার বা দৃষ্টিকোণ সহ্য করা হবে না।আর যদি এই ধরনের ঘটনা পশ্চিম বঙ্গের মত একটি শিক্ষিত রাজ্যে ঘটতে পারে তাহলে কল্পনা করা যায় যে ওই রাজ্যগুলি যেখানে মুসলিম জ্ন্স্নখ্যা বেশি আর শিক্ষার অভাব পশ্চিম বাংলা কে অনুসরন করবে।গত কয়েক বছরে পশ্চিম বাংলায় এমন ধর্মীয় সংগঠন ও উপ সম্প্রদায় গুলি জন্ম নিয়েছে যারা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান এর পালন কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।উদাহরণ স্বরূপ একটা উপ সম্প্রদায় যার অনুগামিবৃন্দ সবুজ পাগড়ি বাঁধে প্রচার করে বেড়ায় যে যে বাড়ির লোকরা দাড়ি কামায় ওই বাড়িতে কিছু খাদ্য বা পান গ্রহন করা পাপ।একইভাবে আর এক গ্রুপ যারা প্রচার করে যে যারা নামাজ পড়ে না তাদের জানাজার নামাজ পড়া বা মুসলিম কবরস্থানে কবর দেওয়া উচিত নয়।মাসুম আখতার তাঁর প্রাণ নিয়ে চিন্তিত কারন ওনাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে আর তাঁর এই ভয় বিত্তিহীন নয়।প্রশাসনের উদাসীনতার ফলে চরমপন্থী জমায়েতগুলি রাজ্যে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে সরকারের এই ধারনা ভুল যে এটা একটি ধার্মিক সমস্যা আর সেই জন্য শুধু একটি ধার্মিক সম্প্রদায় প্রভাবিত হবে. কিন্তু আসলে এটা একটি রাজনৈতিক সমস্যা আর সেই জন্য এই সমস্যা গোটা রাজ্য কে প্রভাবিত করবে। এই ধার্মিক চরমপন্থী চিন্তাধারা বাংলাদেশে একাত্তরের গনহত্যা আর ধর্ষনে অভিযুক্তদের ফাঁসি আর করা দন্ড হবার পর জনমিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ই পশ্চিম বাংলায় ধার্মিক চরমপন্থার উত্থান এর পিছনে চালক শক্তি।মুজিব যুগে পাকিস্তানি সেনার সমর্থকদের ওপর ক্রাক ডাউন এর সময় ব্হু জামায়েতি রাজাকার রা পালিয়ে পশ্চিম বঙ্গে আশ্রয়ে নিয়ে ছিল। ওরা এপার বাংলার বর্ডার এলাকা গুলিতে বসবাস করতে লাগে। অনেকে কলকাতা তে ও চলে আসে।
ওই সাবেক রাজাকার গুলি পুলিশ কে ফাঁকি দিয়ে পশ্চিম বাংলায় ভুও নামে অনেক ধার্মিক ও রাজনৈতিক স্ন্স্থা ও ম্দ্রাসা চালাচ্ছে।সত্য এই যে এরা একই ধার্মিক রাজনৈতিক জমায়েতের চিন্তাধারার প্রচারক ।যদি ও এরা ভারত এর নাগরিকতা প্রাপ্ত করে নিয়েছে আর দেশের মূলধারায় সম্পৃক্ত হয়ে গেছে কিন্তু তাদের আনুগত্য বাংলাদেশে তাদের পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে রয়ে গেছে।তারা তাদের চরম পন্থী চিন্তাধারা কে পরিত্যাগ করে নি। এরা মমতা ব্যানার্জির সরকারের গুরুতর আলোচক কারন মমতা সরকার শেখ হাসিনার সরকারের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপিত করেছে। এরা শেখ হাসিনার জানি দুশমন কারন হাসিনা গনহত্যা ও ধর্ষন এর অভিযুক্তদের ফাঁসি দিয়েছে.
বাংলায় এদের বিভিন্ন স্ন্স্থা ভিন্ন নাম চলছে আর যখন ই দরকার পড়ে এরা এক ছত্রে একজুট হয়ে সরকার কে এই বার্তা দেয় যে রাজ্যের সমস্ত মুসলিম এক আছে আর ওদের বিচার শুধু ওদের নয় সমস্ত রাজ্যের মুসলিম সমাজের সেই জন্য ওদের ওপর হাত দিলে বিপদ হবে।দু বছর আগে এরা পশ্চিম বাংলায়ে পনের দলের অধিবেশন ডেকে বাংলাদেশের হত্যাকারী ও ধার্শ্ন্কারীদের প্রতি সংহতি এবং সহানুভূতি প্রকাশ করে আর রাজ্য সরকার কে হুশিয়ারী দেয় যে 'জালিম আর হত্যাকারী' হাসিনা সরকার কে সমর্থন বা মদত দিলে বরদাস্ত করা হবে না।অতএব সরকার এধরনের স্ন্স্থাগুলির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিবার সাহস পায়ে না। পশ্চিম বাংলায় এমন কিছু সাংবাদিক বা ইসলামবিদ আছেন যারা তাদের লেখার মাধ্যমে রাজ্যের মুসলিম সমাজে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থার প্রচার করতে থাকেন।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের এক ব্লগর ওয়াশিকুর রহমান কে ধার্মিক অসহিষ্ণুতা ও চরমপন্থার আলোচনা করার অপরাধে দুই মাদ্রাসা ছাত্র মেরে ফেলে। ওর অপরাধ এই যে ও সিরিয়ার দায়েশের ইসলাম বিরোধী ক্রিয়াকলাপ ও চরিত্র কে আলোচিত করে ছিল।ও কোরান বা নবীর বিরুদ্ধে কিছু লেখে নি।মাদ্রাসা ছাত্ররা দায়েশ এর আলোচনা সহ্য করতে পারে নি কারন ভারতের উর্ধু আর বাংলাদেশের মিডিয়ার এক অংশ দায়েশ এর প্রশ্নসা এবং মহিমান্বিত করে ছিল এবং তাদেরকে আসল ইসলামী খেলাফতের পতাকা বাহক হিসেবে পেশ করে ছিল।তার ব্লগে ওয়াশিকুর দায়েশের দ্বারা মহিলাদের যৌন শোষণ কে ঠাট্টা করে লিখেছিল:
"নিজের ইচ্ছায়ে যৌন সম্পর্ক করার অভিলাষী এই মহিলাদের কে দেখুন যারা মুসলিম যোদ্ধাদের বিরতায়ে প্রভাবিত। আপনি কি বুঝতে পারেন না যে এতে তারা নিজেও আনন্দ পায়ে।”
উদার চিন্তা ও চিন্তার অন্যান্য স্কুল এর প্রতি এই অসহিষ্ণুতা ও পক্ষপাতদুষ্ট মনোভাব পশ্চিম বাংলার উদার এবং উদারমনা সমাজকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা এবং চরমপন্থার গভীর নরকে ফেলে দিচ্ছে যেখানে প্রত্যেকটি বিরোধী স্বরের হত্যা করে দেওয়া হবে।
ভারতে ক্রমবর্ধমান ইসলামী চরমপন্থার ক্যান্সার এর প্রতি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উদাসীনতার ভর্তুকি সারা দেশ কে দিতে হবে।
0 comments:
Post a Comment